আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis): হাত-পায়ের অতিরিক্ত ঘাম সমস্যার কার্যকর সমাধান

১৯৪০ সাল থেকে হাত এবং পায়ের অতিরিক্ত ঘামের চিকিৎসায় আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সম্প্রতি শরীরের অন্যান্য অংশের অতিরিক্ত ঘাম সমস্যার চিকিৎসায় আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) পদ্ধতিটি আরো কার্যকর করার জন্য এ ধরনের ডিভাইস এর অধিকতর উন্নতি করা হচ্ছে।
পালমার এবং প্লান্টার হাইপারহাইড্রোসিস (হাত পায়ের অতিরিক্ত ঘাম সমস্যা) এর প্রাথমিক চিকিৎসায় সাশ্রয়ী, সহজলভ্য, নিরাপদ এবং কার্যকরী সমাধান হিসেবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। কয়েক দশকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, কোনো উল্লেখযোগ্য বা গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই হাত-পায়ের অতিরিক্ত ঘাম সমস্যায় এই পদ্ধতির প্রয়োগের ফলে রোগীর উল্লেখযোগ্য ঘাম হ্রাস পায় বা বেশিরভাগ সময় ঘাম স্বাভাবিক হয়ে যায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে ৯১% রোগীর অতিরিক্ত ঘাম স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। সাধারণত আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) পদ্ধতি প্রয়োগের সময় একটি ইলেক্ট্রো-মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। যার মাধ্যমে রোগীর ত্বকের পৃষ্ঠে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে একটি হালকা বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালনা করা হয়। এতে রোগী তার হাতে এবং পায়ে হালকা ঝিঁঝিঁ ভাব অনুভব করে।
এ ধরনের ইলেকট্রোমেডিক্যাল ডিভাইসের বৈদ্যুতিক প্রবাহের তীব্রতার হ্রাস বা বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা থাকে। কারণ রোগীভেদে বৈদ্যুতিক প্রবাহের হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে হয়।
আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) মূলত একটি Ionized পদার্থ (সাধারণত ট্যাপের পানি বা ওষুধ) রোগীর একক্রাইন গ্রন্ত্রিতে বৈদ্যুতিক প্রবাহ ব্যবহার করে সরবরাহ করে। যেহেতু বৈদ্যুতিক প্রবাহ রোগীর ত্বক জুড়ে ভ্রমণ করে, আয়নযুক্ত ট্যাপের পানি বা ওষুধ এমনভাবে ঘাম গ্রন্থিগুলোকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয় যে, এটি তাদের ঘাম উৎপাদন করার ক্ষমতা হ্রাস করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আয়ন্টোফোরেসিস প্রয়োগের সময় ট্যাপের পানি ব্যবহার করা হয়। এতে রোগী সন্তোষজনক ফলাফল না পেলে, আয়ন্টোফোরেসিসকে আরো অধিকতর কার্যকর করার উপায় আছে।
সেক্ষেত্রে, ডাক্তাররা ট্যাপের পানির সাথে কিছু ওষুধ যেমন গ্লাইকোপাইরোলেট বা অক্সিবিউটিনিনের মতো অ্যান্টিকোলিনার্জিক যোগ করার পরামর্শ দেন। এই ধরনের ঔষধ আয়ন্টোফোরেসিসকে আরও কার্যকর করে।
সাধারণত মানুষের ত্বক অর্ধভেদ্য, তাই রোগীর শরীর অল্প পরিমাণ ঔষধ প্রবেশ করতে দেয়। এক্ষেত্রে আয়ন্টোফোরেসিস বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমে ত্বকের বাধা ভেদ করে শরীরকে অধিক ওষুধ শোষণে সহায়তা করে।
এটি Ionized ওষুধের শোষণের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ধরনের ওষুধ ত্বকের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। উপরের আলোচনা থেকে আয়ন্টোফোরেসিসকে একটি জটিল চিকিৎসা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং নন-ইনভেসিভ একটি পদ্ধতি। একজন রোগী চাইলে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে এই চিকিৎসা তার বাসায় বসে নিতে পারে। এটি কোন বেদনাদায়ক চিকিৎসা নয়, বরং এটি প্রকৃতপক্ষে হাত-পায়ের অতিরিক্ত ঘামের জন্য বোটক্সের মত অন্যান্য তুলনামূলক চিকিৎসার বিকল্প গুলোর তুলনায় খুবই কম অস্বস্তিদায়ক।
আয়ন্টোফোরেসিস চিকিৎসা চলার সময় হাত ও পাকে ট্যাপের পানিযুক্ত ট্রেগুলোতে রাখতে হয় এবং ট্রেগুলোতে বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালনা করা হয়। সাধারনত ঘাম স্বাভাবিক হয়ে আসার আগ পর্যন্ত এই চিকিৎসা দৈনিক .৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় ধরে নিতে হয়।
যখন ঘাম স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে, তখন ধীরে ধীরে দৈনিক চিকিৎসা নেওয়ার সময় কমিয়ে নিয়ে আসতে হয়। যেহেতু হাত-পায়ের অতিরিক্ত ঘাম সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই, তাই আয়ন্টোফোরেসিস চিকিৎসা নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে উজ্জীবিত রোগীর প্রয়োজন হয়। কেননা এটি জীবনব্যাপী চলমান চিকিৎসা, একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর এই চিকিৎসা নিতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর চিকিৎসা নিয়ে একজন রোগী খুবই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
আয়ন্টোফোরেসিস চিকিৎসার সবচেয়ে ভালো সুবিধা হল এটি নন-ইনভেসিভ এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফলাফল দিতে সক্ষম। এই পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হল এটি শরীরের নির্দিষ্ট কোন অংশে ঘাম সারাতে ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত মুখে খাওয়ার ওষুধ রোগীর সমস্ত শরীরের উপর সিস্টেমেটিক প্রভাব ফেলে, অন্যদিকে আয়ন্টোফোরেসিস শরীরের যে অংশে ব্যবহার করা হয় সেই অংশকে প্রভাবিত করে। এমনকি আয়ন্টোফোরেসিস প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসার মত সাম্ভাব্য জটিলতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না।
সাধারণত আয়ন্টোফোরেসিস এর বিরূপ প্রভাব খুবই হালকা হয়, এর জন্য রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ করতে হয় না। এটি গর্ভবতী মহিলাদের, যাদের পেসমেকারসহ বা প্রচুর পরিমাণে শরীরে ধাতব পদার্থ আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, আয়ন্টোফোরেসিস হলো পালমার এবং প্লান্টার হাইপার-হাইড্রোসিসের জন্য একটি নিরাপদ এবং কার্যকর চিকিৎসা যা প্রায় কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। এটি হাত-পায়ের অতিরিক্ত ঘামের মত বিব্রতকর এবং অস্বস্তিকর ব্যাধি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ-
আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis): হাত-পায়ের অতিরিক্ত ঘাম সমস্যার কার্যকর সমাধান
১৯৪০ সাল থেকে হাত এবং পায়ের অতিরিক্ত ঘামের চিকিৎসায় আয়ন্টোফোরেসিস পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আরো বিস্তারিত….
হোম আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) থেরাপি সেবা
বাসায় বসে আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) থেরাপি সেবা গ্রহণ করে, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে হাত ও পায়ের অতিরিক্ত ঘামকে স্বাভাবিক করুন।
আরো বিস্তারিত….
সোয়েট-গার্ড: আধুনিক আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) ডিভাইস
বাসায় বসে আয়ন্টোফোরেসিস ডিভাইস Sweat- Guard ব্যবহার করে ১৫ দিনের মধ্যে হাত ও পায়ের অতিরিক্ত ঘামের মত বিব্রতকর এবং অস্বস্তিকর শারীরিক সমস্যা প্রশমিত করুন।
 
				

