ঘাম হ্রাসে ইটিএস অপারেশন

এন্ডোস্কোপিক থোরাসিক সিমপ্যাথেক্টমি (ets surgery) হলো বিশেষ ধরনের অস্ত্রোপচার চিকিৎসা যার মাধ্যমে মেরুদন্ডের কাছ থেকে স্নায়ুবিশেষ এর একটি অংশ কেটে ফেলে অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সাধারণত ঔষধ বা অন্যান্য প্রচলিত চিকিৎসা ব্যর্থ হওয়ার পর এটি শেষ অবলম্বন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইটিএস সার্জারির মূল লক্ষ্য হল মেরুদন্ডের কলাম থেকে ঘাম গ্রন্থিগুলিতে ভ্রমণকারী স্নায়ু সংকেতকে বাধা দিয়ে ঘাম গ্রন্থির কার্যকলাপ হ্রাস করা। বিশেষ করে আন্ডারআর্ম বা বগল এবং হাতের তালুতে অতিরিক্ত ঘামের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এটি পা বা শরীরের নিচের অংশের ঘামের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় না।
ETS Surgery এক ধরনের মিনিমালি ইনভেসিভ (minimally-invasive) পদ্ধতি যা সাধারণ এনেস্থেশিয়ার অধীনে সম্পাদিত হয়। একটি ছোট ক্যামেরা এবং যন্ত্রপাতির ছোট্ট একটি ছিদ্র করে রোগীর শরীরে ঢুকানো হয়, যার মাধ্যমে স্নায়ু কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ঘাম গ্রন্থি শনাক্ত করে এটিকে হয় কাটা বা আটকানো হয়। শরীরের একদিকে এই পদক্ষেপগুলি সম্পূর্ণ করার পরে সার্জন অন্যদিকে চলে যান যেখানে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
পরবর্তীতে প্রতিটি ছিদ্র সেলাই করে বন্ধ করা হয় এবং সম্পূর্ণ নিরাময় হাতে কিছু সময় নেয়। যেহেতু ইটিএস রোগীর বুকে বড় কাটার পরিবর্তে ছোট কীহোল ছিদ্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, তাই কোন দাগ হয় না, কম ব্যথা হয় এবং দ্রুত সেরে ওঠে।
পুরো অস্ত্রোপচারে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে এবং বেশিরভাগ রোগী সেদিন বা পরের দিন বাড়িতে চলে যেতে পারে। অস্ত্রোপচারের স্থানে এবং বুকের কিছুটা অংশে ব্যথা হতে পারে, তবে সেলাইগুলো ত্বকের নিচে থাকে এবং সেগুলোও একটা সময় পর মিলিয়ে যাবে।
রোগীরা পরের দিন গোসল করতে পারে এবং কয়েক দিনের মধ্যে কাজ এবং স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে ফিরে আসতে পারে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, একজন দক্ষ সার্জনের হাতে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ কেননা তিনি অভিজ্ঞ এবং নির্ভরতার সাথে অপ্রত্যাশিত ঘটনা গুলো পরিচালনা করতে সক্ষম। যাই হোক, ইটিএস একটি জটিল অপারেশন এবং অন্য যেকোনো অপারেশন এর মত ইটিএস এর কিছু সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি আছে।
অস্ত্রোপচারের স্থানের আশেপাশের কাঠামো এবং স্নায়ুর ক্ষতি এড়াতে অস্ত্রোপচারের অবশ্যই নির্ভুলতা প্রয়োজন। অন্যথায় একটু এদিক-ওদিক হলেই গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শরীরের অংশবিশেষে অনুভূতির দুর্বলতা চলে আসতে পারে এবং রোগীদের বুকের গহ্বরে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে, তবে এই রক্তপাত ক্যামেরা ও অস্ত্রোপচারের যন্ত্র ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এই অস্ত্রোপচারের কিছু অনন্য ঝুঁকি আছে, তারমধ্যে-
০১. যে সমস্ত রোগী এই অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যায় তাদের প্রায় সবার মধ্যে ক্ষতিপূরণমূলক ঘাম (Compensatory sweating) এর ঘটনা ঘটে। হাত বা আন্ডারআর্ম এর ঘাম কমে যাওয়ায় শরীরের অন্যান্য অংশে বেশি ঘাম হতে পারে। ঘামের অবস্থান ও তীব্রতা পরিবর্তনশীল এবং প্রায়ই সময়ের সাথে সাথে হ্রাস পায়। বলাবাহুল্য যে, প্রায় ৯৫% রোগী ক্ষতিপূরণমূলক ঘামকে হাত বা আন্ডারআর্ম এর ঘামের চেয়ে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে মনে করে।
০২. ব্র্যাডিকার্ডিয়া, বা ধীর হৃদস্পন্দন, ইটিএস এর পরে অত্যন্ত বিরল। ক্রীড়াবিদদের এই জায়গায় গভীর মনোযোগ দেওয়া উচিত, কারণ হৃদস্পন্দন হ্রাসের ফলে সর্বোত্তম দক্ষতার স্তর থেকে যথেষ্ট কমে যেতে পারে।
০৩. যদিও ইটিএস এর পরে হর্নার্স সিন্ড্রোমকে অত্যন্ত বিরল জটিলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ০.১% রোগীর মধ্যে এটি ঘটতে পারে। এই ধরনের জটিলতা অস্থায়ী বা স্থায়ী হতে পারে এবং চোখের পাতা ও চক্ষুতারা সংশ্লিষ্ট স্নায়ুর ক্ষতির কারণে ঘটে। রোগীদের ক্ষেত্রে চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া এবং ছোট চক্ষুতারা লক্ষ্য করা যায়।
০৪. প্রদাহজনক ঘাম (Gustatory Sweating): নির্দিষ্ট ধরনের কিছু খাবার খাওয়া বা গন্ধ নেওয়ার সময় মুখে এই ধরনের অস্বস্তিকর ঘাম হয়। ইটিএস এর মধ্যে দিয়ে যাওয়া অল্পসংখ্যক রোগীর মধ্যে ঘটে, তবে এটি সাধারণত বড় সমস্যা নয়।
০৫. ব্র্যাচিয়াল প্লেক্সাস ইনজুরি (Brachial Plexus Injury): যদিও এই জটিলতা খুবই বিরল তবুও ইটিএস এর পর রোগীর উপরের অংশের দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত হবার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত মেরুদন্ডের স্নায়ুর আঘাতের কারণে ঘটে।
০৬. মুখের ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া: ইটিএস এর পরে, কিছু রোগী তাদের মুখ ঘাড় এবং মাথার ত্বকের শুষ্কতা অনুভব করে। এ ধরনের শুস্কতার জন্য ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করা হয়। ত্বকের শুষ্কতা প্রায়ই অনেক ব্রণ সমস্যার উন্নতিতে প্রভাব ফেলে।
ইটিএস অপারেশনে যাওয়ার আগে রোগীর উচিত একজন দক্ষ ডাক্তারের সাথে তার রোগের বিস্তারিত ইতিহাস, বিভিন্ন পরীক্ষা এবং রোগ নির্ণয় নিয়ে আলোচনা করা। ইটিএস অপারেশনকে অবশ্যই শেষ অবলম্বন হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যদি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো প্রথমে ব্যর্থ হয়।
প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ-
আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis): হাত-পায়ের অতিরিক্ত ঘাম সমস্যার কার্যকর সমাধান
১৯৪০ সাল থেকে হাত এবং পায়ের অতিরিক্ত ঘামের চিকিৎসায় আয়ন্টোফোরেসিস পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আরো বিস্তারিত….
হোম আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) থেরাপি সেবা
বাসায় বসে আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) থেরাপি সেবা গ্রহণ করে, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে হাত ও পায়ের অতিরিক্ত ঘামকে স্বাভাবিক করুন।
আরো বিস্তারিত….
সোয়েট-গার্ড: আধুনিক আয়ন্টোফোরেসিস (Iontophoresis) ডিভাইস
বাসায় বসে আয়ন্টোফোরেসিস ডিভাইস Sweat- Guard ব্যবহার করে ১৫ দিনের মধ্যে হাত ও পায়ের অতিরিক্ত ঘামের মত বিব্রতকর এবং অস্বস্তিকর শারীরিক সমস্যা প্রশমিত করুন।
 
				

